মসকুইটো, মুলাঘদের ক্রিকেট সফর - Australian Aboriginals In 1868


     সবাই জানে মসকুইটো বা ডিক-এ-ডিক অথবা টু পেনি কোনো মানুষের নাম হতে পারে না। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে ১৮৬৮ সালের জুন মাসে এইরকম নামেরই কিছু ক্রিকেটার এমসিসির বিপক্ষে ক্রিকেট খেলেছিলেন। তাঁদের খেলা দেখেছিলেন ক্রিকেটের জনক ডব্লিউ জি গ্রেস(১৮৪৮-১৯১৫) এবং প্রশংসাও করেছিলেন।
            এঁরা কারা? আসলে এঁরা ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান অ্যাবরিজিনাল ক্রিকেটার অর্থাৎ সেই সুদূর অতীত থেকে যে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষেরা অস্ট্রেলিয়ার আদি বাসিন্দা অর্থাৎ ভূমিপুত্র, তাঁরাই সেদিন সদলবলে ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন ক্রিকেট খেলতে।
            এখানে সালটা লক্ষ্যণীয়, ১৮৬৮। অর্থাৎ শ্বেতাঙ্গ অস্ট্রেলিয়ানদের টিম লর্ডসের মাঠে নামার ১০ বছর আগে এবং বহুল প্রচারিত ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া অ্যাশেজ সিরিজ শুরু হওয়ার ১৪ বছর আগে।
            আজ অস্ট্রেলিয়া টিমে একজনও কৃষ্ণাঙ্গ ভূমিপুত্রের স্থান নেই। কেন নেই সে কথা কারোর মাথাতেও আসে না। অথচ আসল অস্ট্রেলিয়ান তো তাঁরাই!
            অস্ট্রেলিয়ার সিডনির শহরতলিতে একজন ক্রিকেট কোচ থাকতেন। তাঁর নাম চার্লস লরেন্স(১৮২৯ - ১৯১৭)। তাঁর হোটেল ব্যবসাও ছিল। অ্যাবরিজিনালদের নিয়ে একটি ক্রিকেট টিম তৈরি করে বিলেতে ঘুরিয়ে আনার কথা তাঁর মাথাতেই প্রথম এসেছিল। লরেন্সের এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে টাকা বিনিয়োগে সম্মত হলেন দু'জন - সিডনির তৎকালীন প্রাক্তন মেয়র জন স্মিথ এবং জি ডব্লিউ গ্রাহাম নামে এক ব্যক্তি।
            বুদ্ধিমান লরেন্স ইডেনহোপে পৌঁছেই স্থানীয় খবরের কাগজগুলিকে হাত করেন, যাতে তাঁর এই সফরকে নিয়ে অহেতুক বিতর্ক না তৈরি হয়। তিনি যে কোনো ঠগ নন, সেটা প্রচার করাও ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। তিনি লন্ডনের এমসিসি কর্তাদের সাথেও চিঠি লিখে যোগাযোগ করেন।
ইংল্যান্ড রওনা হওয়ার আগে ওয়েস্টার্ন ভিক্টোরিয়া থেকে খেলোয়াড় বেছে, তাঁদের দিয়ে স্থানীয় ম্যাচ খেলিয়ে তবেই টিম বানিয়েছিলেন লরেন্স। তিনি হ্যামিল্টন স্পেক্টেটর পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও ছাপালেন যে ওয়েস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টের ষোলো বা আঠেরো জনের যেকোনো টিমের সাথে তাঁর লরেন্স ইলেভেন খেলতে আগ্রহী।
            লরেন্স তাঁর টিমের খেলোয়াড়দের পোশাকের দিকেও নজর দিয়েছিলেন। তাঁদের পরনে থাকত সাদা ফ্লানেল ট্রাউজার(ওপরে নীল ডোরাকাটা), নীল ইলাস্টিক বেল্ট, সাদা লাইনেনের কলারসহ নেকটাই এবং ফ্রেঞ্চ মেরিনো আন্ডার শার্ট। লরেন্সের মাথায় থাকত সাদা টুপি। এছাড়া অন্যান্য ক্রিকেটার যথা মুলাঘের মাথায় লাল টুপি, কুজেন্সের মাথায় বেগুনি, ডিক-এ-ডিকের মাথায় হলুদ, মসকুইটোর মাথায় গাঢ় নীল, পিটারের মাথায় সবুজ, জিম ক্রোর মাথায় গোলাপি, বুলোকির(উইকেট কিপার) মাথায় চকোলেট, কিং কোলের মাথায় ম্যাজেন্টা রঙের টুপি থাকতকিন্তু যে ক্রিকেটারটির নাম রেড ক্যাপ, তাঁর মাথায় কেন কালো টুপি থাকত তা বোধগম্য নয়। অবশ্য ইংল্যান্ডে গিয়ে আর এসব থাকেনি। একজনের টুপি অন্যজন পরে খেলতে নামতেন।
            এখন প্রশ্ন অ্যাবরিজিনালদের এইরকম নাম হল কী করে! আসলে এইসব নাম শ্বেতাঙ্গদের দেওয়া। নামকরণের মধ্য দিয়ে ঠাট্টা করার ইঙ্গিত লক্ষ্যণীয়, আবার তাঁদের উচ্চারণের সুবিধার জন্যও! তাঁদের আসল নামগুলি ছিল -
জনি মুলাঘ - উনাররিমিন(১৩ই আগস্ট ১৮৪১ - ১৪ই আগস্ট ১৮৯১)
হ্যারি বুলোকি - বুলচানাচ(মৃত্যু ১৮৯০)
সানডাউন - বালরিন
ডিক-এ-ডিক - জুঙ্গুনজিনানুকে(১৮৩৪-১৮৭০)
জনি কুজেন্স - জেল্লানাচ
কিং কোল - ব্রিপুম্যারিমিন
রেড ক্যাপ - ব্রিম্বুন্যা(মৃত্যু ১৮৯১)
টু পেনি - মুররুমগুনারিম্যান(১৮৪৫-১৮৮৩)
চার্লি ডুমাস - প্রিপুমুয়াররামান
জিমি মসকুইটো - গ্রৌগাররঙ
টাইগার - বনিনবারনগিট
জিম ক্রো - জাল্লাচনিউরিমিন(মৃত্যু ১৮৭০)

            ১৮৬৭ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর ইডেনহোপ থেকে বিরাট ঘোড়ার গাড়িতে ঠাসাঠাসি করে ১৩ জন ক্রিকেটার, লরেন্স, হেম্যান(রান্নার লোক ও স্কোরার) এবং কোচম্যান রওনা হলেন, সঙ্গে ক্রিকেটের সরঞ্জাম। তারপর ওয়ারাম্বুল, গিলং প্রভৃতি জায়গায় ক্রিকেট খেলে ১৮৬৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে টিমটি অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরে পৌঁছায়
            ১৮৬৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি সিডনি থেকে পারামাটা নামের একটি উল বোঝাই জাহাজে চড়ে টিমটি রওনা হয় ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে। যদিও ইডেনহোপ থেকে যারা রওনা হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে টারপেট অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁর আর যাত্রা করা হয়নিএইড রোজ নামের ক্রিকেটারটিকে গিলং থেকেই বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর জায়গায় টিমে ঢোকেন টাইগার ও চার্লি ডুমাস। দলের বিজনেস ম্যানেজার ছিলেন কিং। গ্রাহামের দায়িত্ব ছিল দলের খুঁটিনাটি সামলানো।
            ১৮৬৮ সালের ১৩ই মে ইংল্যান্ডের গ্রেভসেন্ড বন্দরে পৌছায় দলটি। পুরনো স্কোরবুক খুলে দেখা যায়, ২৫শে মে ওভালে তাঁদের প্রথম ম্যাচ এবং ওখানেই তাঁদের শেষ ম্যাচের(১৫-১৭ই অক্টোবর) মধ্যেকার ১২৬ দিনের মধ্যে রবিবার বাদে অ্যাবরিজিনালরা ৯৯ দিনই মাঠে নেমেছিলেন খেলতে। ১৫টি কাউন্টিতে, ৪০টি জায়গায় মোট ৪৭টি ম্যাচ খেলতে হয়েছিল তাঁদের। ক্রিকেটের ইতিহাসে এটিই বোধহয় সবচেয়ে ব্যস্ত সফর।
            খেলা চলত সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। মাঝে দুপুরে ২টো থেকে ৩টের মধ্যে ৩৫ মিনিটের লাঞ্চ হত। যদিও বেশিরভাগ মাঠে লাঞ্চের ব্যবস্থা থাকত না। খেলোয়াড়রা বিভিন্ন তাঁবু থেকে খাবার কিনে খেতেন বা মাঝে মাঝে দর্শকরা তাঁদের দিতেন। কিন্তু সেইসব খেলায় কোনো টি-ব্রেক ছিল না।
            শুধু ক্রিকেট খেলা নয়, খেলার শেষে অ্যাবরিজিনালদের বর্শা ছোঁড়া, বুমেরাং ছোঁড়া ও আরও বিভিন্ন খেলা দেখিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিতে হত!

            এই সফরের সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হল ক্রিকেটার কিং কোলের মৃত্যু। তাঁর যক্ষা ধরা পড়ে। ২৪শে জুন লন্ডনের একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। এছাড়া জিম ক্রো ও সানডাউনকে অসুস্থতার জন্য আগস্ট মাসে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়। মোট ৪৭টা ম্যাচের সবকটাতেই খেলেছিলেন রেড ক্যাপ ও টাইগার। কুজেন্স খেলেছিলেন ৪৬টি ম্যাচে, ডিক-এ-ডিক ও মুলাঘ ৪৫টি ম্যাচে এবং লরেন্স ও বাকিরা ৪০টি ম্যাচে অংশ নিয়েছিলেন। এর থেকেই বোঝা যায় কী পরিমাণ ক্লান্তি তাঁদের গ্রাস করেছিল।
            স্থানীয় সারে অঞ্চলের ডব্লিউ শেফার্ড ছিলেন আম্পায়ার। যদিও খেলোয়াড় না থাকায় তাঁকেও ৭টি ম্যাচে নামতে হয়েছিল এবং লরেন্সের অনুপস্থিতিতে টিমের অধিনায়কও হয়েছিলেন।
            অ্যাবরিজিনালদের টিম ১৪টি ম্যাচ যেতে ও ১৪টি ম্যাচ হারে। বাকি ১৯টি ম্যাচ ড্র হয়। তবে খারাপ আবহাওয়ার জন্য বেশ কিছু ম্যাচ ভণ্ডুল হয়। টিমটি মোট ১১বার প্রথমে ব্যাট করেছিল। যদিও তখনকার দিনে সফররত টিমকে আগে ফিল্ডিং করতে দেওয়ার রেওয়াজ চালু ছিল। টস তখনও সেভাবে চালু হয়নি।
            শুরুতে ব্রিটিশ সংবাদপত্র এই টিমের খেলাকে ভালোই প্রচার দিচ্ছিল। শেফিল্ড টেলিগ্রাফে লিখেছিল, নিশ্চিতভাবে শতাব্দীর সেরা ঘটনাপড়ে অবশ্য তাদের উৎসাহ কমে যায়। স্থানীয় সংবাদপত্রেই এই খেলার খবর ছাপা হত। বিখ্যাত উইজডেন পত্রিকা ম্যাচগুলির শুধু স্কোর ছাপত, খেলার কোনো বর্ণনা দিত না।
            স্থানীয় জনগণের মধ্যে অবশ্য এই খেলা নিয়ে যথেষ্ট উৎসাহ ছিল। এই কারণে আগস্ট মাস পর্যন্ত ১০টি ম্যাচ খেলার কথা হলেও টিমটি অক্টোবর মাস পর্যন্ত থেকে যায়। ওভালের প্রথম ম্যাচে ৭০০০ দর্শক হয়েছিল। শেফিল্ড ও হোভে ৫০০০ এবং লর্ডসে ৩০০০ দর্শক সমাগম হয়। লিউইশ্যামে তাঁরা প্রথম ম্যাচ জেতেন ৪০০০ দর্শকের সামনে। তখনকার বিচারে দর্শক উপস্থিতি মোটেই খারাপ নয়। তবে বহুক্ষেত্রে বৃষ্টি দর্শকদের মাঠে আসতে বাধা দিয়েছিল।
            অ্যাবরিজিনালদের দেহসৌষ্ঠব দেখে তৎকালীন সংবাদপত্র লিখেছিল, "They are no means unintellectual"আবার শেফিল্ডের এক লেখকের বর্ণনায় ঔপনিবেশিক মনোভাব লক্ষ্যণীয়, "They are like developed Europeans"

            সাধারণত কৃষ্ণাঙ্গ অ্যাবরিজিনালদের প্রতি দর্শক ও উদ্যোক্তারা উদার মনোভাবই দেখিয়েছিলেন। তবে ইয়র্কে খেলার শেষে তাঁদের লাঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এর প্রতিবাদে মুলাঘ বলেছিলেন, আমি আর মাঠেই নামব না। আবার এই টিমকেই ওভালে শেষ ম্যাচের পর ডিনারে আপ্যায়ন করা হয়েছিল গোড়ায় এমসিসি এই দলটিকে লর্ডসে খেলার ব্যাপারে আপত্তি জানায়। কিন্তু জনমতের চাপেই হোক বা অন্য কোনো কারণে আপত্তি বেশিদিন টেকেনি।
            লর্ডসের খেলায় এমসিসি যথাক্রমে ১৬৪ ও ১২০ রান তোলে। দুই ইনিংসে কুজেন্স ৬০ ওভার বল করে ১১৭ রানে মোট ১০টি উইকেট নেন। মুলাঘ নেন ৬২ ওভারে ১০১ রান দিয়ে ৮ উইকেট কুজেন্সের বলে এমসিসির ব্যাটসম্যান ব্যাটহার্স্ট দুই ইনিংসেই শূন্য রানে আউট হন। প্রথম ইনিংসে অ্যাবরিজিনালরা করেছিলেন ১৮৫ রান। পরের ইনিংসে তাঁদের সবকটি উইকেট মাত্র ৪৫ রানে পড়ে যায়। তার মধ্যে আবার দ্বিতীয় ইনিংসে বুলোকি ব্যাট করতে অস্বীকার করেন। কেন জানা নেই!
এই খেলায় ডব্লিউ জি গ্রেস অংশ নেননি। তবে খেলা দেখেছিলেন। তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে ওঁদের দক্ষতা সত্যিই অদ্ভুত। পরবর্তীকালে নিজের লেখা বইতেও গ্রেস এই খেলার একটি অস্পষ্ট ছবির স্থান দিয়েছিলেন।
            দলের সব ম্যাচ মিলিয়ে ৪৯৮৩ ওভারের মধ্যে মুলাঘ, কুজেন্স ও লরেন্সই করেছিলেন ৪৩২৪ ওভার। তাঁরা মোট ৬০৯টি উইকেট পেয়েছিলেন। বাকিরা ১০৫টি। টু পেনি খুব ভালো লং স্টপ ফিল্ডার ছিলেন। তখনকার দিনে এবড়োখেবড়ো মাঠে ফিল্ডিংয়ের ওই পজিশনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
            ব্যাটে লরেন্স, মুলাঘ, কুজেন্স প্রত্যেকেই হাজারের ওপর রান করেছিলেন। মুলাঘের সংগ্রহ ছিল ২৩.৬৫ গড়ে ১৬৯৮ রান। তবে টিমের কেউই ব্যাটে সেঞ্চুরি পাননি। মুলাঘের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ছিল ৯৪ রান, কুজেন্সের ৭৮। মসকুইটো ৪৬ ইনিংসের মধ্যে ২৬টিতে নট আউট ছিলেন, কিন্তু মোট ৭৭ রান করেছিলেন মাত্র!

            অ্যাবরিজিনালরা খুবই চিত্তাকর্ষক ক্রিকেট খেলতেন। মাঠে তাঁরা খুব প্রাণবন্ত আচরণ করতেন। দর্শকদের সঙ্গে মিশতেন, তাঁদের দেওয়া কেক, বিস্কুট, মিষ্টি খেতেন। ফ্লাস্ক থেকে ঢালা গরম পানীয়ও জুটত মাঝে মাঝে।
            ৩রা সেপ্টেম্বর টেন্টব্রিজে ক্রিকেট ম্যাচ শেষ হওয়ার পর অ্যাবরিজিনালরা যেসব কসরত দেখিয়েছিলেন, সেগুলি হল:
1.      100 yards flat race
2.      Running high jump
3.      Standing high jump
4.      150 yards hurdle race
5.      Vaulting with poles
6.      Throwing the cricket ball
7.      100 yards backward
8.      Water bucket race
9.      Throwing the boomerang, spears and kangaroo rats by the blacks
10.  Lawrence feat with bat and ball
11.  Dick-a-Dick dodging the cricket ball
 
            চার্লি ডুমাস ছিলেন বুমেরাং ছোঁড়ায় সবচেয়ে দক্ষ। মুলাঘও ছুঁড়তেন। বুটলের মাঠে একবার মুলাঘের ছোঁড়া একটা বুমেরাং এক দর্শকের মুখে গিয়ে লাগে এবং তাঁর মাথার টুপি ফেলে দেয়। তবে ক্যাঙ্গারু র‍্যাটস বলে যে খেলাটির কথা বলে হয়েছে সেটি আসলে উইট-উইট। দু'ফিট উঁচু কাঠের অস্ত্র দিয়ে পাখি ধরার খেলা এটি। এছাড়া ডিক-এ-ডিক খুবই পারদর্শী ছিলেন আরেকটি খেলায়। তাঁকে চারিদিক থেকে বল ছুঁড়ে মারা হত এবং তিনি একটি ঢাল নিয়ে নিজেকে বাঁচাতেন।

            একথা বলা যাবে না যে অ্যাবরিজিনালদের ক্রিকেট সফর ছিল নিতান্তই চমক। ১৮৬৮ সালে ক্রিকেটের যা মান ছিল, অ্যাবরিজিনালরা তার থেকে খুব একটা পিছিয়ে ছিলেন না। তাঁদের টিমের বেশিরভাগ খেলোয়াড় দুর্বল হলেও প্রতিপক্ষের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়।

            খেলার শেষে ১৮৬৮ সালের ১৯শে অক্টোবর যে জাহাজটি ইংল্যান্ডের গ্রেভসেন্ড থেকে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়, তাতে ছিলেন বুলোকি, পিটার, টাইগার ও টু পেনি। এক সপ্তাহ পর অন্য জাহাজে প্লেমাউথ থেকে বাকিরা অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। দেশে ফিরেও তাঁরা বেশ কিছু ম্যাচ খেলেন। সর্বশেষ ম্যাচটি হয়েছিল মেলবোর্নে, ১৮৬৯ সালের মার্চ মাসে। সেখান থেকে অ্যাবরিজিনালরা যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

            এর পরের ইতিহাস অন্ধকারে ঢাকা। অ্যাবরিজিনালদের অনেকেই অল্প বয়সে মারা যান, অনেকের কোনো হদিশই পাওয়া যায় না।
            ডিক-এ-ডিক সম্ভবত ১৮৭০ সালে মারা যান। মসকুইটো ছিলেন ভালো সূত্রধর। তাঁর কী পরিণতি হয়েছিল জানা যায়নি। তিনি কোনো বংশধর রেখে যাননি। রেড ক্যাপ জমিজমা নিয়ে মোটামুটি স্বস্তিতে বসবাস করেছিলেন। সম্ভবত ১৮৯১ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। টু পেনি ৩৮ বছর বয়সে ১৮৮৩ সালে মারা যান। জিম ক্রো সম্ভবত ১৮৭০ সালে খুন হয়ে যান। টাইগার মারা যান ১৮৮৪-র আগেই। এইচ রোজের মৃত্যু হয় ১৯১৬ সালে। টারবাট সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। অধিনায়ক চার্লস লরেন্স সেই সফরে প্রায় ২০০০ পাউন্ড লোকসান করেছিলেন, যদিও পরবর্তীকালে হোটেল ব্যবসায় যথেষ্ট সফল হন। ১৯১৭ সালে ৮৮ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।
            মুলাঘ এর পরেও ১৮৭৯ সালে লর্ড হ্যারিসের অল ইংল্যান্ড টিমের বিরুদ্ধে ভিক্টোরিয়ানদের হয়ে খেলেছিলেন। সেই ম্যাচে তিনি করেছিলেন ৪ ও ৩৬ রান। খেলার পর তাঁর অবদানের জন্য তাঁকে ৫০ পাউন্ড ও একটি সোনার ঘড়ি দেওয়া হয়। তিনি এই একটিই প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছিলেন।
            মুলাঘ বিয়ে করেননি। ১৮৯১ সালের ১৮ই আগস্ট একটি বাঁধের কাছে ঝোপের মধ্যে মুলাঘের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়।



            অ্যাবরিজিনালদের আগমনে লন্ডনের দি টাইমস রিপোর্ট দেয়:
                Their hair and beards are long and wiry, their skins vary in shades of blackness, and most of them have broadly expanded nostrils. Having been brought up in the bush to agricultural pursuits under European settlers, they are perfectly civilized and are quite familiar with the English language.
            এরপর ডেইলি টেলিগ্রাফ লেখে:
            It is highly interesting and curious, to see mixed in a friendly game on the most historically Saxon part of our island. representatives of two races so far removed from each other as the modern Englishman and the Aboriginal Australian. Although several of them are native bushmen, and all are as black as night, these Indian fellows are to all intents and purposes, clothed and in their right minds.

            তারপর থেকে আজ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিমের সামনের সারিতে সেখানকার ভূমিপুত্রদের কার্যত দেখা যায়নি।

Comments